ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। কারণ আজকের আর্টিকেলে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে ঘূর্ণিঝড় কেন হয়ে থাকে এবং  ঘূর্ণিঝড় হলে সেই সময় কি করা উচিত সেসব বিষয়ে নিচে  বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।




ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে

 

প্রকৃতির এক বিশাল ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া এই ঘূর্ণিঝড়। যে ঝড়ে বাতাস বৃষ্টি প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চলে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে। পৃথিবীতে গড়ে প্রতিবছর প্রায় আশিটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০০০০ মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মারা যায়। 



ঘূর্ণিঝড় কেন হয় 


ঘূর্ণিঝড় সাধারণত  বিষুব রেখার আশেপাশে বা গ্রীষ্ম মন্ডলীয় সমুদ্র অঞ্চলে উৎপন্ন হয়।সমুদ্রের যেসব অঞ্চলে প্রায় দেড়শ ফুটের বেশি  গভীর পর্যন্ত তাপমাত্রা 26° সেলসিয়াস এর উপরে থাকে যেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে।


নিম্নচাপ কি

গ্রীষ্মকালে বিষুব অঞ্চলে প্রচন্ড উত্তাপ হলে বাতাস গরম হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় তখন সেখানে বায়ুর চাপ ব্যাপক হারে কমে যায় একে নিম্নচাপ বলে। তখন বাতাসের  শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য মেরু অঞ্চলের শীতল বায়ু দ্রুত বেগে নিম্নচাপ অঞ্চলে আসতে থাকে। এই বায়ুপ্রবাহ থেকেই ভয়ংকর কালো মেঘের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ বিশ্বের ছয়টি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে কিছু তথ্য

পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বাতাস সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে দক্ষিণ গোলার্ধের বাম দিকে এবং উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে  বেঁকে যায় সে কারণেই দক্ষিণ গোলার্ধের ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাটার দিকে এবংউত্তর   গোলার্ধের ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘোরে। প্রতি বছর যতগুলো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তার খুব কম সংখ্যকই উপকূলে আঘাত হানে। অধিকাংশ ঘূর্নিঝড় সমুদ্রে উৎপন্ন হয়ে সমুদ্রেই শেষ হয়ে যায় ।


কোন ঝড় বাতাস বাষট্টি কিলোমিটারের কম বেগে ধাবিত হলে তাকে সাধারণ মৌসুমী ঝড় হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। যে সমস্ত ঝড় ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার থেকে ৮৮ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে সেগুলোই মূলতই ঘূর্ণিঝড় ।


তীব্র ঘূর্ণিঝড়ঃ ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যদি ২৮ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার এর মধ্যে থাকে তাহলে তাকে বলে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলে।


প্রবল ঘূর্ণিঝড়ঃ ঘন্টায় ১১৮ কিলোমিটার থেকে ২১৯ কিলোমিটার গতিবেগে চলার ঝড় কে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ।


সাইক্লোনঃ ২২০ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি গতিতে  প্রবাহিত হলে তাকে বলা হয় সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে   আঘাত  হানার পর সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টি হলো সেটি হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস ।ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাসের কারণে সমুদ্রের পৃষ্ঠের জল ২০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে যেতে পারে।

যার ফলে সমুদ্র তীরবর্তী ১০০ কিলোমিটার এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।


যেসব কারনে মানুষের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ৯০ শতাংশ মারা যায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এটি পৃথিবীর আবহাওয়ার অত্যন্ত জরুরি একটি প্রক্রিয়া।


তাপমাত্রা বজায়

ঘূর্ণিঝড়ের ফলে আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা ভারসাম্য বজায় থাকে। পৃথিবীর অধিক ঘূর্ণিঝড় প্রবল এলাকাগুলোকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। অঞ্চল ভেদে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় গুলোকে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়।




মহাসাগর এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় সাইক্লোন। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এবং  উত্তর পূর্ব  প্রশান্ত মহাসাগরকে হারিকেন নামে ডাকা হয়। এবং উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ঘূর্ণিঝড় কে বলা হয়  টাইফুন।সাম্প্রতিক সময়ে অতীতের তুলনায় অধিক পরিমাণে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশিক উষ্ণায়ন ।

সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে এই দুর্যোগ আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।


ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার উপায়ঃ আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের আবহাওয়ার সংকেত পাওয়ার সাথে সাথে জনগণকে সতর্ক করে দিতে হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদেরকে অধিকতর গুরুত্বের সাথে সচেতন করতে হবে। আগে থেকেই নিম্ন এলাকার অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য স্থান তৈরি করে রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার সংগ্রহ করে রাখতে হবে উচ্চস্থানে বসত স্থাপন করতে হবে।


জেলেদের নিষেধ করতে হবে নদীতে বা সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের সময় চলাচল না করতে একমাত্র সচেতন তাই পারে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে। তাই আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

 

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বাড়ির চারপাশ দিয়ে বড় বড় গাছ লাগাতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে যারা সমুদ্রে নৌকা নিয়ে চলাচল করে তাদেরকে সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাড়িতে শুকনো খাবার রাখতে হবে যেন দুর্যোগের সময় সেগুলো খেয়ে জীবন যাপন করা যায়। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url