খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?খালি পেটে কলা খাওয়া কি ভালো নাকি খারাপ? কলা খাওয়ার উপকারিতা কি জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। আপনি কি সকালে খালি পেটে কলা খাচ্ছেন জানেন এতে করে আপনার কি হচ্ছে? আজকের এই আর্টিকেলের মাঝে আলোচনা করব সকাল বেলা খালি পেটে কলা খেলে কি হয় কলা খাওয়ার উপকারিতা কি।
পেজ সূচিপত্রঃ খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?খালি পেটে কলা খাওয়া কি ভালো নাকি খারাপ? কলা খাওয়ার উপকারিতা কি জেনে নিন
- খালি পেটে কলা না খাওয়ার পরামর্শ সর্ম্পকে জেনে নিন
- কলা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা কেন প্রতিদিন কলা খাওয়া উচিত?
- শেষ আলোচনা
খালি পেটে কলা না খাওয়ার পরামর্শ সর্ম্পকে জেনে নিন
ডিম ও দুধের পাশাপাশি সকালের খাবারের তালিকায় কলা রাখতে দেখা যায় অনেককেই এর অবশ্য কারণও আছে অনেক। কেননা কলায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ দ্রুত শক্তি জোগাতেও কলার জুড়ি নেই। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সকালের খাবারের জায়গায় দেখা যায় কলাকে। স্বাস্থ্যকর খাবার পরামর্শ দিলেও বিশেষজ্ঞরা নিষেধ করছেন সকালের খাবারের তালিকায় কলা নামক ফলটি রাখতে। খালি পেটে কলা খেলে সত্যিই কি কোন সমস্যা হয়? নিষেধের কারণেই বা কি? আজকের আর্টিকেলের মধ্যে জেনে নিন -
কলায় ভিটামিন বি৬ থাকে প্রচুর পরিমাণে। যদিও এর সঙ্গে ভিটামিন সি এর কোন সম্পর্ক নেই।একটা মাঝারি মাপের কলা আপনাকে শরীরে দশ শতাংশ প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি দিতে পারে। কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফাইবার। গ্যাস অম্বল ও হজমের সমস্যা দূর করে কলা এতে তিনটি ন্যাচারাল সুগার থাকে সুক্রোজ গ্লুকোজ। এতে কোলেস্টেরল ফ্রি এনার্জি তৈরি হয় শরীরে। কলায় থাকা সুগার শরীরের প্রায় ২৫শতাংশ প্রয়োজন মিটায়। কিন্তু যুক্ত হয়ে শরীরে প্রবেশ করলে এসিডিটি নেচার গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দিনের শুরুতে কলা খেলে এর ফলে আপনার আরো ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত লাগতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে শরীরে ক্ষতি হয় অনেক বেশি। ক্ষুদার পরিমাণ এতটাই বাড়তে থাকে যে খাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়ে শরীরে ওজন বাড়াতে থাকে। তাই খালি পেটে নয় সকালে খাবারের অন্তত ঘন্টাখানেক পরে খেতে পারেন কলা।
কলা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা কেন প্রতিদিন কলা খাওয়া উচিত?
শক্তি ও এনার্জি বৃদ্ধির জন্যঃ কলার মধ্যে ভরপুর মাত্রায় সুগার এবং পটাশিয়াম থাকার জন্য আমাদের শরীরে শক্তি এবং এনার্জি বৃদ্ধিতে ভালো সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন যদি দুটি করে কলা খাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে শক্তি ও এনার্জি বৃদ্ধিতে খুব ভালোভাবে সহায়তা করে।
উত্তেজনা ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কলাতে অ্যামাইনো এসিড ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এই মিনারেল গুলো আমাদের শরীরে খুব প্রয়োজন মানসিক উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এছাড়াও যারা নিয়মিত এনজাইটি ও ডিপ্রেশন এবং টেনশনে ভোগে রাতে ঘুমের সমস্যা আছে সেক্ষেত্রে কলা ঔষধের মতো কাজ করে। কারণ কলার মধ্যে এমন কিছু কম্পাউন্ড আছে যেগুলো আমাদের ব্রেনের মধ্যে সেরোটোনিন মেলাটোনিন এই যে দুটি হরমোন আছে। এদের ক্ষরণকে বাড়িয়ে দেয় তাই প্রতিদিন দুটি করে কলা খেলে মানসিক উদ্বেগ কমে উত্তেজনা কমে দুশ্চিন্তাও কমে এমনকি রাতে খুব সুন্দর ঘুম হয়। এক্ষেত্রে প্রতিদিন বিকালে দুটি করে কলা খাবেন এবং রাতে যদি গরম দুধ খেতে পারেন তাহলে এ ধরনের সমস্যা গুলো খুব দ্রুত সমাধান হবে।
হার্টের রোগীর জন্যঃ যারা হার্টের বিভিন্ন রকম রোগে ভুগছেন বা হার্ট দুর্বল আছে তারা তাদের হার্ট কে মজবুত শক্তিশালী করতে চান সেক্ষেত্রে এক বাটি মুড়ির মধ্যে দুই থেকে তিন চামচ মধু এবং দুটি কলা দিয়ে মেখে সেটি একবার করে খেতে পারেন। এতে করে হার্ট খুব শক্তিশালী ও মজবুত হবে এবং হার্টের বিভিন্ন সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকবে।
নাক দিয়ে রক্তপাত কমায়ঃ যাদের নাক দিয়ে রক্তপাতের সমস্যা আছে বা অন্য যে কোন কারণ ছাড়াই নাক দিয়ে রক্তপাত হয় তাদের জন্য কলা খুবই দরকারি একটি খাবার। এই সমস্যার ক্ষেত্রে এক গ্লাস মৃদু উষ্ণ দুধের মধ্যে দুই থেকে তিন চামচ চিনি এবং দুটি কলা ছোট ছোট টুকরো করে তার মধ্যে দিয়ে দিন এবং সেটাকে খুব সুন্দর ভাবে মিশ্রিত করে প্রতিদিন একবার করে খান। এভাবে সাত থেকে আট দিন খেলে নাক থেকে রক্তপাতের সমস্যা চিরতরে দূর হয়ে যাবে।
ওজন বৃদ্ধির জন্যঃ যাদের শরীর খুব রোগা পাতলা শরীরের ওজন কোন কারণেই বাড়ছে না। শরীর সবসময় ক্লান্ত দুর্বল থাকে তাদের জন্য কলা একান্ত উপযোগী। প্রতিদিন দুটি করে কলা সকালের নাস্তা করার পর খাবেন এবং প্রতিদিন রাতে একগ্লাস করে দুধ খাবেন এতে করে শরীরের ওজন খুব দ্রুত বাড়তে দেখা যায়।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্যঃ যারা গর্ভবতী আছেন তাদের জন্য শরীরে ভিটামিন মিনারেল এর খুব ঘাটতি হয়ে থাকে। তাদের জন্য কলা কিন্তু খুবই উপকারী প্রতিদিন দুটি কলা খেলে শরীরের ভিটামিন মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট এর চাহিদা খুব সুন্দর ভাবে পূরণ হবে। এমনকি মায়ের পেটে যে ভূর্ণ আছে সেটি বৃদ্ধির জন্য বা বিকাশের জন্য কলা খুবই উপযোগী।
শিশুদের বাড় বৃদ্ধি মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যঃ শিশুদের বাড় বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রতিদিন দুটি করে কলা দিবেন। কারণ কলার মধ্যে যতগুলো ভিটামিন বি থাকে সেগুলো কিন্তু প্রেজেন্ট থাকে। যেমন ভিটামিন বি১, বি৬, ভিটামিন বি৩, বি৯। এছাড়াও ভরপুর মাত্রায় পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। শিশুদের বাড় বৃদ্ধির জন্য এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই কার্যকরী তাই প্রতিদিন শিশুদের দুটি করে কলা খেতে দেবেন।
বয়স্কদের জন্যঃ বিশেষ করে ৪০ থেকে ৫০ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জন্য বা পটাশিয়ামের ঘাটতির জন্য নানা রকম সমস্যা হয়ে থাকে। আপনারা সকলেই জানেন যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে পটাশিয়াম সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যালসিয়াম জনিত সমস্যার কারণে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। হাড়ের বিভিন্ন রকম রোগ হয় যেমন অস্টিওপোরেসিস এই জাতীয় রোগ কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুটি করে কলা খাওয়া উচিত। কলার মধ্যে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন বি ৬ ও ফাইবার থাকে তাই বয়স্কদের প্রতিদিন দুটি করে কলা খেতে দিবেন।
গ্যাস্ট্রিক- আলসারের সমস্যার ক্ষেত্রেঃ যাদের দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাস্ট্রিক আলসার সমস্যা ভুগছেন তারা প্রতিদিন কালা খান। কারণ কলার মধ্যে এমন কিছু কম্পাউন্ড আছে যেগুলো আপনার গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়ঃ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন দুটি করে কলা খান এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।
শেষ আলোচনাঃ উপরে উক্ত আলোচনার সাপেক্ষে আশাকরি জানতে পেরেছেন কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে সেটি খালি পেটে খাওয়া একদমই যাবেনা। খালি পেটে কলা খেলে উপকারের জায়গায় আপনার অপকার হতে পারে। তাই শরীরের স্বাস্থ্য নানা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নিয়মিত দুটি করে কলা সেবন করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url