সকালে খালি পেটে লেবুর রস হালকা গরম জল খেলে শরীরের কি পরিবর্তন ঘটে সে সম্পর্কে জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকের আলোচনা সকালে খালি পেটে লেবুর রস খেলে শরীরে কি পরিবর্তন ঘটে জানলে অবাক হবেন। আজকের আর্টিকেলে সকালে খালি পেটে লেবুর রস হালকা গরম জল খেলে শরীরের কি পরিবর্তন ঘটে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।



তাই যারা এই সম্পর্কে না জানেন তারা  পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে জানতে পারবেন সকালে খালি পেটে লেবুর রস খেলে কি হয়? চলুন তাহলে দেরি না করে দেখে নিন সকালে খালি পেটে লেবুর রস হালকা গরম জল খেলে শরীরে কি পরিবর্তন ঘটবে সে সম্পর্কে।


পেজ সূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে লেবুর রস হালকা গরম জল খেলে শরীরের কি পরিবর্তন ঘটে সে সম্পর্কে জেনে নিন



লেবুর উপকারিতা সম্বন্ধে 

পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই যে আমরা লেবুকে চিনে থাকি না। তবে লেবুর কিছু উপকারী বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো দামি দামি ওষুধের ক্ষেত্রও পাবেন না। লেবু যদি আপনি জলের সাথে প্রতিদিন সকালে মিশিয়ে খান সেক্ষেত্রে আপনি তার অনেক রকম উপকারিতা  পেতে পারেন ।তাই লেবুর জল ব্যবহার করলে তার কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।


  • প্রতিদিন লেবু জলের ব্যবহার আপনার স্কিনকে সতেজ রাখেঃ প্রতিদিন লেবুর জল ব্যবহার করলে এটি স্কিনকে টানটান রাখতে সহায়তা করে। লেবু এন্টিএজেন্ট রুপে কাজ করে। যার কারণে স্কিনে বয়সের ছাপ খুব তাড়াতাড়ি আসে না। লেবুতে কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা স্কিনের নিচে থাকা কোলাজেন তৈরি  করতে সাহায্য করে। কোলাজেন এক ধরনের মাসেল ফাইবার যেটি আপনার স্কিনকে পরস্পরের সাথে মজবুত করতে রাখতে সাহায্য করে। আর তার ফলে বয়সের ছাপ তাড়াতাড়ি আসে না। যাদের কোলাজেনের টিস্যু কম থাকে অর্থাৎ কমে যায় তাদের  সময়ের আগে কিন্তু স্কিন লুজ হয়ে যায় অর্থাৎ  স্কিন ঝুলে যায় এবং বয়সের ছাপ আসে। এরপর যাদের কোলাজেনের অভাব হয় তাদের কিন্তু ব্রাশ করার সময় মাড়ি দিয়ে রক্ত আসতে থাকে।

  • এটি কিন্তু কোলাজেনের অভাবে হয়। কোলাজেন হাড়ের জোড়ার মাঝেও থাকে এটি হাড়ের মজবুত প্রদান করে থাকে। শরীরে কোলাজিনের টিস্যু যত বেশি থাকবে শরীরে কিন্তু রিংকেলস তত কম আসবে। এর পাশাপাশি আপনার হার ও জয়েন্টের মাঝে থাকা কাটালিস্ট টিস্যু ততো মজবুত থাকবে। শরীরে কাটালিস্ট টিস্যু তৈরি হওয়ার জন্য ভিটামিন সি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি লেবুতে কিন্তু ভিটামিন সি অনেক বেশি পরিমাণে থাকে আপনি যদি সারাদিনে একটি লেবু খান তাহলে কিন্তু সারাদিনে আপনার ভিটামিন সি সেটি কিন্তু ৫০% পূরণ হয়ে যায় এবং আপনি যদি সারাদিনের মধ্যে দুটি লেবু খান তাহলে কিন্তু আপনার শরীরে ১০০% ভিটামিন সি পুরোপুরি ভাবে পূরণ হয়ে যাবে।

  •  

  • লিভার ডিটক্সিফিকেশনঃ লেবু পানি লিভারকে ডিটক্সিফিকেশন করতে সাহায্য করে এবং ফ্যাটি লিভার কেউ ঠিক করে লিভার ফাংশন ঠিক করতেও সাহায্য করে। লিভার আমাদের শরীরে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেটি কিন্তু সব সময় কাজ করছে আমাদের শরীরে ফিল্টার রূপে। যার অর্থ এটি কিন্তু রক্তকে সব সময় ফিল্টার করছে যার ফলে ধীরে ধীরে লিভারের ভিতরে দূষিত পদার্থ জমা হয়। মানে টক্সিন জমা হতে থাকে যার ফলে কিন্তু ফ্যাটি লিভার বা লিভারের বিভিন্ন প্রবলেম কিন্তু শুরু হতে থাকে। লেবুতে কিন্তু বিভিন্ন নিউট্রেশন পাওয়া যায় যেটা কিন্তু আপনার লিভারে জমে থাকা দূষিত পদার্থ চর্বি  এবং টক্সিন কে  লিভারের বাইরে অর্থাৎ ডিটক্স করতে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।


  • যার ফলে লিভার সমস্যা যাদের আছে তারা লেবুর জল বেশি বেশি করে খেতে পারেন। এর পাশাপাশি যারা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তারা কিন্তু হাই ভেজিটেবল বেশি পরিমাণে খাবেন। যেমন সবুজ শাকসবজি আপনার খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণ রাখবেন কারণ যত আপনি সবুজ শাকসবজি খাবেন সে ক্ষেত্রে আপনার লিভার টা তত ভালো থাকবে। এর পাশাপাশি কিন্তু আপনার লাইফ স্টাইল এবং খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখতে হবে। যদি আপনি ভুলভাল উল্টোপাল্টা জিনিস খান এবং আপনার লাইফস্টাইল যদি ভুল হয় সেক্ষেত্রে আপনি ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন না।

  •  

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করাঃ শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য যে ক্ষমতা থাকে সেটি কিন্তু আমরা immunity system হিসেবে চিনে থাকি। যখন শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয় তখন কিন্তু আমরা শরীরে সর্দি-কাশি কিংবা বিভিন্ন ধরনের  রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। লেবুতে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন সি কিন্তু ইউনিটি পাওয়ার কে বাড়াতে সাহায্য করে এবং আমাদের রোগ থেকে মুক্তি দেয়। সারাদিন আপনার শরীরে যে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন সেটি কিন্তু ৫০% লেবুতে হয়ে যায়। তাই আপনি যদি লেবুর মাধ্যমে ভিটামিন সি পূরণ করতে চান সে ক্ষেত্রে একটি থেকে দুটি লেবু জলের মাধ্যমে গুলিয়ে খেতে পারেন।


  • হার্টের রোগ থেকে আপনাকে বাঁচায় লেবুর জল আপনার হার্টের শিরার ব্রকেজের হাত থেকে রক্ষা করে। যখন আমাদের ভিটামিন সি-এর অভাব হয় তখন কিন্তু আমাদের শিরার ভিতরে ড্যামেজ হওয়া শুরু হয় এবং সেই ড্যামেজ হয়ে যাওয়া অংশে ধীরে ধীরে ফ্যাট জমতে থাকে। যার ফলে ব্রকেজ তৈরি হয়। লেবু ব্যবহার করলে এর থেকে ভিটামিন সি পাই এর ফলে শিরার যে ক্ষত থাকে সেই ক্ষতটাকে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যার   ফলে লেবু জল ব্যবহার করার কারণে হার্টের রোগ থেকেও কিন্তু মুক্তি পাওয়ার চান্স রয়েছে।


  • কিডনি পাথর প্রতিরোধঃ কিডনির পাথর দূর করার জন্য লেবু কিন্তু ঔষধের মতো কাজ করে। এখন কিন্তু বর্তমান সময়ে কিডনিতে পাথর এই সমস্যা বেশি দেখা যায় এবং সবথেকে যেটা বেশি দেখা যায় কিডনি স্টোন গুলি ক্যালসিয়াম অক্সিলেট। কিডনি স্টোন এবং সে ক্ষেত্রে কিন্তু ক্যালসিয়াম এবং অক্সিলেট একে অপরের সাথে মিশে পাথর তৈরি করে। লেবুতে যে সাইট্রিক এসিড থাকে এই সাইট্রিক এসিড কিন্তু কিডনির  পাথরের হাত থেকে আমাদের রেহাই দেয় এবং পাথর তৈরি হতে দেয় না। কিডনিতে পাথর তৈরি হয়ে গিয়েছে অলরেডি সেই স্টোন গুলো কিন্তু ভেঙ্গে বের করে দেয় এর পাশাপাশি এই সময়ে রোগীদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় লেবুর জল বেশি বেশি পরিমাণে খাওয়ার। তাই লেবুর পানি খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে বেশি পরিমাণে পানি ও পান করতে হবে। যদি আপনার কিডনিতে পাথর থেকে থাকে এবং এই কিডনিতে পাথর যদি আপনার ব্যথার পর্যায়ে চলে যায় সেক্ষেত্রে কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।


  • মেদ ও চর্বি  ক্ষয়ঃ লেবুর জল কিন্তু ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে  শুধু যে লেবুর জল ই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে অর্থাৎ  চর্বি ক্ষয় করতে সাহায্য করবে সেটি কিন্তু একদমই ভুল। লেবুতে ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোল করে ফলে আমাদের শরীরের ইনসুলিন হরমোন রিলিজ হয়। যার ফলে শরীরে কম চর্বি জমে তাই সে ক্ষেত্রে ওজন ঝরানোর জন্য লেবুর ভূমিকা কিন্তু অনেক কম। লেবুকে কিন্তু আপনি হেলদি ড্রিঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অনেকে মনে করেন লেবুর জল বেশি পরিমাণে খেলে আপনার শরীরে বাড়তি  চর্বি ঝরে যাবে এটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। কারণ আমাদের শরীরে চর্বি জমা হয় তখনই যখনই আমরা উল্টোপাল্টা জিনিস খাওয়া-দাওয়া করি এবংআমরা ভুল লাইফস্টাইল এর মাধ্যমে চলাফেরা করি। তাই আপনাকে আগে আপনার বাজে অভ্যাসটাকে পরিবর্তন করতে হবে এবং এর পাশাপাশি আপনারা ডায়েট কন্ট্রোল করুন এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করুন। লেবুর জল খেয়ে কিন্তু ওয়েট কমানো একেবারেই সম্ভব না এই ভুল ধারণা থেকে কিন্তু আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে।


  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ লেবুতে কিন্তু বহু পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এটি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের  ক্ষত এবং ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি দেয়। সেক্ষেত্রে এই ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনার লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করা অত্যন্ত জরুরি এবং লাইফস্টাইল এর উপর কিন্তু নজর রাখা জরুরি। কারণ আপনি যদি ভুলভাল মধ্যপান করেন যেমন বিড়ি সিগারেট কিংবা তামাক জাতীয় এই সমস্ত জিনিস খান সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি লেবুর জল খেয়ে বাঁচবেন না তাই লেবুর জল খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে এইসব বদ অভ্যাস  পরিত্যাগ করতে হবে। 

সকালে লেবু পানি খেলে যে ১২ টি উপকার পাবেন সে সর্ম্পকে জেনে নিন

  •  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

  •  হজম শক্তি বাড়ায়

  •  শরীর হাইড্রেট রাখে

  •  বয়স ধরে রাখে

  •  লিভারের কার্যক্রম সচল রাখে

  •  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

  •  কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে

  •  মুখের দুর্গন্ধ হতে দেয় না

  •  বিপাকে সাহায্য করে

  •  গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য

  •  ক্লান্তি দূর করে

  •  ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী 


লেবুর জল ব্যবহার করার সময় যে ভুলগুলি মোটেও করবেন না


লেবু জল ব্যবহার করার সময় লেবু জলের সাথে স্বাদ আনার জন্য কখনোই চিনি মেশাবেন না। কারণ আপনি যদি বেশি পরিমাণে চিনি মেশান তাহলে কিন্তু লেবুর জলের যে উপকারিতা সেটি কিন্তু আপনি মোটেই পাবেন না। এর পাশাপাশি লেবুর জল কিন্তু এসিডি হয় লেবুর জলে ভিটামিন সি থাকে এতে কিন্তু হিট সেন্সিটিভ হয়। তাই লেবুর জল খাওয়ার সময় আপনি যদি জল অত্যন্ত পরিমাণে গরম করেন সে ক্ষেত্রে হিট সেন্সিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যার ফলে লেবুর যে উপকারী রয়েছে সেগুলো কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। তাই লেবুর জল কিন্তু আপনি কখনোই অত্যাধিক পরিমাণে গরম করবেন না এর পাশাপাশি অনেকের কিন্তু সাইট্রাস জাতীয় সমস্যা থাকে। যাদের সাইট্রাস জাতীয় সমস্যা রয়েছে তাদের কিন্তু এই সাইট্রিক এসিডযুক্ত খাবার খেলে গ্যাস পাম করে।  তাই যাদের সাইট্রাস জাতীয় প্রবলেম আছে তারা কিন্তু সাইট্রিক এসিড অর্থাৎ সাইট্রিক অ্যাসিডযুক্ত লেবু খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন।

 

শেষ আলোচনাঃ  উপরি উক্ত আলোচনার সাপেক্ষে আশা করি জানতে পেরেছেন সকালে খালি পেটে লেবুর জল খেলে শরীরের কি ধরনের পরিবর্তন হতে দেখা যায়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত লেবুর জল সেবন করুন এতে করে শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। শরীরের নানা ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে লেবু অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তাইলে লেবুর জল আপনাদের নিয়মিত সেবন করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url