ঈদে যেভাবে বিরিয়ানি খেলে ওজন বাড়বে না সে সর্ম্পকে জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। অনেকেই যারা মোটা হওয়া নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকে। ঈদ উৎসবে কমবেশি ঈদের সময়  বিরিয়ানি খেয়ে থাকে কিন্তু অনেকেই মোটা হওয়ার ভয়ে  বিরিয়ানি পছন্দ হওয়া সত্বেও খেতে চায় না। তাই আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব ঈদে যেভাবে বিরিয়ানি খেলে  ওজন বাড়বে না। যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে ঈদে বিরিয়ানি খেলে ওজন বাড়বে না। তাহলে চলুন দেরি না করে দেখে নিন কিভাবে বিরিয়ানি খেলে ওজন বাড়বে না সে সম্পর্কে।


পেজ সূচিপত্রঃ ঈদে যেভাবে বিরিয়ানি খেলে ওজন বাড়বে না সে সর্ম্পকে জেনে নিন

ঈদে উৎসবের এক অনিবার্য অংশ হলো সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে বিরিয়ানি। এই সময় সবারই খাবার টেবিলে থাকে বিভিন্ন প্রকারের বিরিয়ানি। তবে, এতো সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে গিয়ে অনেকেই ওজন বাড়ার আশঙ্কায় ভোগেন। কিন্তু, কিছু সহজ কৌশল মেনে চললে ঈদের বিরিয়ানি উপভোগ করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ঈদে যেভাবে বিরিয়ানি খেলে ওজন বাড়বে

১. পরিমাপ করুন বিরিয়ানি খাওয়ার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিমাণ। একবারে অনেকটা খেয়ে ফেলার পরিবর্তে ছোট ছোট অংশে খাবার গ্রহণ করুন। এটি শুধুমাত্র ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে না, বরং খাবার ধীরে ধীরে উপভোগ করতেও সাহায্য করবে।

২. সালাদ এবং সবজি সংযুক্ত করুন বিরিয়ানির সাথে সালাদ ও সবজি খান। সালাদ ও সবজি খাবারকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের সম্ভাবনা কমায়। সালাদে টমেটো, শসা, গাজর, লেটুস প্রভৃতি সবজি ব্যবহার করতে পারেন। এতে পেট ভরবে, কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ হবে না।

৩. মাংসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন বিরিয়ানির মাংসের অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বেশি মাংস খেলে ক্যালোরি ও ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই, মাংসের পরিবর্তে বেশি পরিমাণে ভাত খান, তবে তা অবশ্যই পরিমাণমত। মুরগি বা মাছের মতো লো-ফ্যাট মাংস নির্বাচন করতে পারেন।

৪. ক্যালোরি-মুক্ত পানীয় পান করুন বিরিয়ানির সাথে কোমল পানীয়, ফলের রস বা মিষ্টি পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালোরি থাকে। এর পরিবর্তে পানি, লেবুর পানি বা গ্রিন টি পান করুন।

৫. স্বাস্থ্যকর রান্নার উপকরণ ব্যবহার করুন বিরিয়ানি রান্নার সময় স্বাস্থ্যকর উপকরণ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সাদা চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা কুইনোয়া ব্যবহার করতে পারেন। সসের জন্য কম তেলে রান্না করা টমেটো বা দই ব্যবহার করতে পারেন।

৬. শারীরিক কার্যক্রম বজায় রাখুন ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সাথে সাথে শারীরিক কার্যক্রম বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটাহাঁটি করুন, ছোটখাটো ব্যায়াম করুন বা পরিবারের সদস্যদের সাথে খেলাধুলা করুন। এতে ক্যালোরি বার্ন হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৭. খাবার গ্রহণের সময় খাবার গ্রহণের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। রাতে দেরি করে বিরিয়ানি না খাওয়াই ভালো। রাতে দেরি করে খেলে হজম হতে সময় নেয় এবং ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। দুপুর বা সন্ধ্যায় বিরিয়ানি খেলে তা হজম হতে সহজ হয়।

৮. অতিরিক্ত মিষ্টি থেকে দূরে থাকুন ঈদের সময় নানা ধরনের মিষ্টি খাবার থাকে। বিরিয়ানির পর অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মিষ্টি খাবারে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ক্যালোরি থাকে যা ওজন বাড়ায়। এর পরিবর্তে ফলের সালাদ বা দইয়ের মত স্বাস্থ্যকর মিষ্টি খাবার নির্বাচন করুন।

৯. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। ঈদের সময় নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হলেও তা সম্ভব। মনকে শক্ত করে খাবারের পরিমাণ ও ধরন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

১০. স্বাস্থ্যকর ডেসার্ট নির্বাচন করুন ঈদের খাবারের পর সাধারণত ডেসার্ট হিসেবে হেভি মিষ্টি খাওয়া হয়। এর পরিবর্তে হালকা এবং স্বাস্থ্যকর ডেসার্ট নির্বাচন করুন। দই, ফ্রুট সালাদ বা চিয়া পুডিং হতে পারে একটি ভালো বিকল্প।

১১. বাড়িতে তৈরি খাবার বাইরের খাবারের পরিবর্তে বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাড়িতে তৈরি বিরিয়ানিতে আপনি উপকরণ ও তেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এতে খাবার সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হবে।

১২. ধীরে ধীরে খাবার খান খাবার দ্রুত খেয়ে ফেলার পরিবর্তে ধীরে ধীরে খান। এটি আপনার মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণতার সিগন্যাল পাঠাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

পুষ্টিগত বিষয়গুলো বিবেচনা করা বিরিয়ানির প্রধান উপাদানগুলো হল চাল, মাংস (যেমন মুরগি, খাসি, গরু বা মাছ), তেল ও মসলা। এই উপাদানগুলোতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে পরিমিত না হলে উচ্চ ক্যালোরি গ্রহণের কারণ হতে পারে। চালের পরিমাণ কমানো বিরিয়ানির একটি প্রধান উপাদান হল চাল। চালে উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট থাকে যা বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, বিরিয়ানির চালের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে আপনি ক্যালোরি কমাতে পারেন। আপনি চাইলে ব্রাউন রাইস বা কুইনোয়া ব্যবহার করতে পারেন যা সাদা চালের তুলনায় কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত এবং বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন। মাংসের পরিমাণ ও ধরণ পরিবর্তন বিরিয়ানিতে মাংসের ব্যবহার খুবই সাধারণ, কিন্তু মাংসের প্রকার এবং পরিমাণ ওজন নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। চর্বি কমানো মাংস যেমন মুরগির বুকের মাংস, বা মাছ ব্যবহার করতে পারেন। এটি স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমাবে এবং প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি করবে। আপনি চাইলে মাংসের পরিমাণও কিছুটা কমিয়ে দিতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় - খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

তেলের ব্যবহার সীমিত করা তেল বিরিয়ানির একটি অপরিহার্য উপাদান, কিন্তু অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে ক্যালোরি বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, বিরিয়ানি রান্নার সময় কম তেল ব্যবহার করুন এবং সম্ভব হলে স্বাস্থ্যকর তেল যেমন অলিভ অয়েল বা ক্যানোলা অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। মসলা ও উপাদান যোগ করা মসলা বিরিয়ানির স্বাদ ও পুষ্টিগুণ উভয়ই বাড়িয়ে তোলে। হলুদ, জিরা, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি মসলাগুলি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, বরং এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণ। এছাড়া, মটরশুঁটি, গাজর, পালং শাক ইত্যাদি সবজি যোগ করে আপনি বিরিয়ানির পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি অবলম্বন করুন

১. ভাপিয়ে বা গ্রিল করে রান্না করা মাংস ভাজার পরিবর্তে আপনি তা ভাপিয়ে বা গ্রিল করে রান্না করতে পারেন। এতে অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না এবং মাংসের স্বাদও অটুট থাকে।

২. প্রাকৃতিক মসলার ব্যবহার প্রাকৃতিক মসলা ব্যবহার করে আপনি অতিরিক্ত ক্যালোরি না বাড়িয়েও বিরিয়ানির স্বাদ বাড়াতে পারেন। প্রক্রিয়াজাত মসলা বা সস ব্যবহার না করে বাড়িতে তৈরি মসলা ব্যবহার করতে পারেন।

৩. সবজি যুক্ত করা বিরিয়ানিতে সবজি যুক্ত করলে তার পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ক্যালোরি কম হয়। ব্রকলি, ফুলকপি, মটরশুঁটি, গাজর ইত্যাদি সবজি ব্যবহার করতে পারেন।

৪পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সুস্বাদু বিরিয়ানি খেতে গেলে অনেক সময় আমরা পরিমাণে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই, প্রতিবার বিরিয়ানি খাওয়ার সময় পরিমাণের প্রতি খেয়াল রাখুন। ছোট প্লেটে খাবার পরিবেশন করলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

৫ নিয়মিত ব্যায়াম করা বিরিয়ানি খাওয়ার পর যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তবে ক্যালোরি বার্ন হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মডারেট ইন্টেনসিটি ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এছাড়া, হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি শারীরিক কার্যকলাপগুলিও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

৬ পর্যাপ্ত পানি পান করা খাওয়ার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পানি আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে এবং খাওয়ার সময় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখে। ### মনস্তাত্ত্বিক দিক আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে মনস্তাত্ত্বিক দিকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনোযোগ সহকারে খাবার খান এবং ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে খাবারের স্বাদ ও পরিপূর্ণতা বেশি অনুভব করবেন এবং অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো সম্ভব হবে।

উপসংহারঃ বিরিয়ানি খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা কোনও সমাধান নয়। বরং, সঠিক পদ্ধতি ও কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে আপনি ওজন বৃদ্ধি না করেই বিরিয়ানির স্বাদ উপভোগ করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর উপাদান নির্বাচন, পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে আপনি সুস্থ ও ফিট থাকতে পারবেন। খাদ্যের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বজায় রেখে জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই, আপনার খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি ছাড়াই বিরিয়ানি উপভোগ করুন।

আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন মাত্র ৭ দিন কালোজিরা ও মধু খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জেনে নিন

ঈদের উৎসবে বিরিয়ানি খাওয়ার মজা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার দরকার নেই। কিছু সহজ কৌশল মেনে চললেই আপনি ওজন বাড়ার আশঙ্কা ছাড়াই বিরিয়ানির স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর উপকরণ ব্যবহার, শারীরিক কার্যক্রম বজায় রাখা এবং সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি ঈদের উৎসবের আনন্দ ও স্বাস্থ্য দুটিই বজায় রাখতে পারবেন। বিরিয়ানি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার যা বিভিন্ন ধরণের মসলা ও মাংস দিয়ে তৈরি হয়। এই খাবারটি খুবই সুস্বাদু হলেও অনেকেই এর উচ্চ ক্যালোরির কারণে এটি এড়িয়ে চলেন, বিশেষ করে যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি এবং কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে বিরিয়ানি খাওয়া ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে বাধা দেওয়া সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা সেই পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি ওজন না বাড়িয়েও বিরিয়ানি উপভোগ করতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url