সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় - সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য
সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয় যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে এই সমস্যা মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে যায়। এই আর্টিকেলে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা হবে। হয়রানি থেকে বাঁচতে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয় পড়ুন।
যদি আপনার এই সাইবার বুলিং বিষয়ে ধারণা থাকে, তাহলে আপনি সঠিক সময়ে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয় কাজে লাগাতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখিয়ে, ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে বিব্রত করে হয়রানি করানোর যেই প্রক্রিয়া সেটির জন্য আপনাকে খুব সাবধানে চলতে হবে।
পেজ সূচিপত্র
সাইবার বুলিং কাকে বলে
ইন্টারনেট বা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যদি কাউকে হ্যারাসমেন্ট করা হয়, তাহলে সেটি সাইবার বুলিং হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। কারও গোপনীয় কোন তথ্য বা হয়রানি মূলক কোনো মেসেজ এবং অশালীন কোন কথাবার্তা, কোন ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যা কোন তথ্য যদি ছড়ানো হয় তাহলে সেটি সাইবার বুলিং এর আওতায় আনা হয়।
এছাড়াও অনেক সময় ক্ষতি করার জন্য কাউকে যদি শারীরিক এবং মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়, অপমান বোধক কিছু বলা হয় বা মজা করে অপদস্থ করা হয়, তাহলে এটি বুলিং এর অন্তর্ভুক্ত হয়। পাশাপাশি কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে যদি অতিরিক্ত টিটকারি করা হয়, তাহলে সেটিও খুবই অপমানজনক হয়ে থাকে।
বিশেষ করে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় না জানলে অনলাইনে যদি কারও ছবি ভিকটিমের পারমিশন ব্যতীত শেয়ার করে দেয়া হয়, তাহলে সেটিকে সরাসরি সাইবার বুলিং বলা হয়। একজন ব্যক্তিকে যদি সবার সামনে দোষারোপ করা হয় কোন কারণ ছাড়াই বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করে তাহলে বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে।
যেহেতু এটি একটি সাইবার অপরাধ তাই এই অপরাধ দমন করার জন্য আইন বিদ্যমান রয়েছে। তাই প্রত্যেককেই অত্যন্ত সচেতনতার সাথে চলতে হবে এবং সাইবার বুলিং এর কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য
সাইবার বুলিংয়ের ভার্চুয়াল হয়রানির জন্য সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় না জানলে সেটি আক্রমণাত্মক হোক বা ইচ্ছাকৃত হোক তার কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। চলুন জেনে আসি সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি হতে পারে।
- যদি কোন সাইবার বুলিং ব্যক্তি একই কাজ বারবার করে থাকে, সেটি হোক নিজে বা কোন ব্যক্তির মাধ্যমে তাহলে এটি এর মধ্যে পড়ে।
- এই ভার্চুয়াল জগতে খুব সহজেই নিজের পরিচয় গোপন রাখা যায়।
- কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যারা প্রতিনিয়ত এই সাইবার বুলিংয়ের কবলে পড়ে সমাজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
- সাইবার বুলিং এর শিকারের তালিকায় নারীরা সবার প্রথমে রয়েছে।
- পরিসংখ্যান অনুসারে এই সাইবার বুলিং এর প্রায় ছিয়াত্তর শতাংশ নারীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
- বেশিরভাগ নারীরাই সাইবার বুলিং এর কবলে শতকরা পনের থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে পড়ে থাকে।
- অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের এই সাইবার বুলিং থেকে বেঁচে থাকা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সাইবার বুলিংয়ের পরিসংখ্যান
যেহেতু সাইবার বুলিং এর সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেইক্ষেত্রে এর সাথে নতুন প্রযুক্তির সাথে যেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলো রয়েছে তার মাধ্যমেও অনেক লোক সাইবার বুলিং এর সমস্যায় পড়ে যান। তাই এই সাইবার বুলিং সমস্যাটি নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা করা হয়েছে।সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় এবং সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য জেনে গবেষণার মাধ্যমে সাইবার বুলিং এর একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে যেমন,
১। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী যারা রয়েছে অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সাইবার বুলিংয়ে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ছে। অনেকের ক্ষেত্রে সপ্তাহে একবার অথবা একাধিকবারও এই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে।
২। উন্নত বিশ্বে অর্থাৎ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই সাইবার বুলিং এর পর্যালোচনা করে কিছু ডেটা সংগ্রহ করা হয় যা পরবর্তীতে পরিসংখ্যান হিসেবে প্রকাশ পায়।
৩। খুব দীর্ঘ সময়ের সাইবার বুলিংয়ে আক্রান্ত হওয়ার পরে সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য না জেনে প্রায় শতকরা চল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন শতাংশ শিক্ষার্থীরা এতে জড়িয়ে পড়েন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে যায়।
৪। এছাড়াও এই বুলিং এর কবলে বিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ নারী সাইবার বুলিং এর মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মধ্যে দুই থেকে এক শতাংশ গুরুতর হয়ে যায়, যা সারানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
৫। বিশেষ করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বা আইসিটি এর মাধ্যমে আক্রমনাত্মক হয়ে থাকে এবং সাইবার বুলিং এর ঝুঁকি ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে থাকে।
৬। সাইবার বুলিংয়ের এই শতাংশ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই এই সমস্যা কিশোরী এবং যারা তরুণ রয়েছে তাদের মধ্যে অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে এবং যারা নাবালিকা রয়েছে নতুন প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে তাদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৭। এই ভার্চুয়াল সময়ের জগতে যারা কিশোরী রয়েছে, তাদের ব্যবহার করে অনেক সময় সাইবার বুলিং করা হয়। সামাজিকভাবে তারা অনেক বেশি হেয়প্রতিপন্ন হয়ে যায় বলে পরবর্তীতে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিও দেখা যায়।
৮। সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য না জানার ফলে অনলাইনের মাধ্যমে যেই সব কিশোরী বা নারী রয়েছেন যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। বিভিন্ন মেসেজের মাধ্যমে বা ফেক আইডির মাধ্যমে তাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
৯। পরিসংখ্যান থেকে অনেক ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত এর সংখ্যা অনেক বড় যার ফলে এই দায় থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় জেনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
১০। সামাজিক বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে যেই সাইবার বুলিং বৃদ্ধি পাচ্ছে তা যেকোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে, গোষ্ঠী বা গ্রুপ তৈরি করে, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করার মাধ্যমে এবং ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারে ইত্যাদি থেকে অতি সাবধানে সতর্ক হয়ে চলতে হবে।
সাইবার বুলিং এর ক্ষতিকর প্রভাব
সাইবার বুলিং এমন একটি বিষয় যা একজন ব্যক্তির পুরো জীবনকেই শেষ করে দিতে পারে। এখন আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করে অনেকেই জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। অনেকেই আবার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিব্রত বা অপমানিত করতে পারে।
অনেক সময় সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য না জানার ফলে বিখ্যাত খেলোয়াড়, অভিনেতা ব্যবসায়ী কিংবা সমাজের উঁচু ব্যক্তিদের দেখা যায় আক্রমণাত্মক হতে। এইগুলো মূলত সাইবার বুলিং এর ফলেই হয়ে থাকে। আবার অনেকেরই দেখা যায় স্পর্শকাতর মুহূর্তের কিছু ছবি বা ঘটনা অনুমতি ব্যতীত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে শেয়ার করে ফেলে।
আরও পড়ুনঃ কিভাবে ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখতে পারেন
এর ফলে অনেক বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সাইবার বুলিংয়ের অনেক ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যিনি সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকেন, তার মধ্যে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস কমে যেতে থাকে। সামাজিক আচরণে পরিবর্তন দেখা যায় এবং এই ধরনের ব্যক্তিরা বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে।
তাদের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করে। অনেকেই আবার মাদকাশক্তিতে জড়িয়ে পড়েন এবং অসৎ সঙ্গীদের সাথে মেলামেশা করতে থাকেন। এছাড়াও আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। অবশ্যই আপনাকে সচেতনতার মাধ্যমে সাইবার বুলিং এর ক্ষতিকর প্রভাব জেনে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় এর মোকাবেলা করতে হবে।
সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয়
যদি আপনি এই ডিজিটাল যুগে সাইবার বুলিংকে প্রতিরোধ করতে চান তাহলে আপনাকে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো জানতে হবে। কারণ দিন দিন এই সমস্যাটি বেড়ে যাওয়ার ফলে নানা ধরনের অনিরাপত্তা থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য জেনে যদি আপনি একটু সতর্ক হয়ে চলার চেষ্টা করেন, তাহলে সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আপনাকে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। চলুন সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে কি হতে পারে জেনে নিই।
- বিভিন্ন ধরনের গুজব শুনলেও আপনাকে এড়িয়ে যেতে হবে, গুজবে কান দেওয়া যাবে না।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য তৈরি করা ফেক প্রোফাইল সম্পর্কে সতর্কতা অর্জন করতে হবে।
- অনলাইন হ্যারাসমেন্ট কে প্রতিরোধ করতে আপনাকে ইন্টারনেট ব্যবহারে খুব ভালোভাবে সচেতন হয়ে পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে হবে।
- আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সাথে শেয়ার করা থেকে একটু বিরত থাকতে হবে, যেন কোনভাবেই আপনাকে ক্ষতির মুখে না পড়তে হয়।
- আপনাকে ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, কোনভাবেই অসচেতন হওয়া যাবে না।
- প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করতে আপনি সাইবার বুলিং ব্যক্তিকে ব্লক করে দিতে পারেন।
- সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে কোন ধরনের অচেনা ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ব্যক্তিগত যে কোন তথ্য যেমন জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর এগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে যে কারো সাথেই শেয়ার করে ফেলবেন না।
- সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় হল অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতে হবে।
- কেউ যদি আপনাকে অশ্লীল কোন মেসেজ পাঠিয়ে থাকে তাহলে তাকে কোন প্রতিক্রিয়া দিবেন না।
- আপনার ব্যবহৃত ডিভাইস অর্থাৎ মোবাইল বা কম্পিউটার যেটিই হোক না কেন কোন ধরনের অবাঞ্চিত সফটওয়্যার ইনস্টল করবেন না।
সাইবার বুলিং এর ফলাফল কি
বিভিন্নভাবে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় এবং সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে এর ফলাফল সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায় যে, সাইবার বুলিং এর কবলে যারা পড়ে থাকেন, তারা অত্যন্ত হতাশাগ্রস্থ এবং উদ্বেগ হয়ে পড়েন। যার ফলে তাদের সামাজিকভাবে খুবই বিমর্ষ এবং ড্রাগ ব্যবহারের মাধ্যমে ভোগার লক্ষণ দেখা যায়।
যেহেতু সাইবার বু্লিং এর ফলে ভিকটিমের আত্মমর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। সেইক্ষেত্রে একাডেমিক ফলাফল খুব বেশি খারাপ হয়ে যায় এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন সম্পর্ক অনেক বেশি হ্রাস পায়। এই অবস্থায় সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে সেই ব্যক্তি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে।
এছাড়াও সাইবার বুলিং এর ফলে একজন ব্যক্তির মধ্যে ক্রোধ, খুব দুঃখ, হতাশা এবং অসহায়ত্বের অনুভূতি তৈরি হয়। যার ফলে সে স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে না। তাদের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া কাজ করে যে, সহানুভূতির অভাব এবং অসামাজিক আচরণ এই সব দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে মাদকের ব্যবহার ও অপরাধমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড করতেও দেখা যায়।
শেষকথা
এই পোস্টে সাইবার বুলিং প্রতিরোধে করণীয় বিষয়, সাইবার বুলিং এর বৈশিষ্ট্য এবং আরও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। যদি আপনার কাছে এই ধরনের বিষয়গুলো জেনে ভালো লেগে থাকে, তাহলে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করে আমাদের সাথেই থাকুন। ২৫২৭৫
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url