আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি
আপনারা প্রশ্ন করেছেন আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি? আর তাই আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব, আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি সে সম্পর্কে। আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন। চলুন তাহলে দেখে নেই আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি বিস্তারিতভাবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি
ভূমিকা
অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম হলো আখ। আখ থেকে চিনি পাওয়ার পাশাপাশি আখের রস এবং গুড় পাওয়া যায়। আখ চাষের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জিবনের চিনি ও গুড়ের চাহিদা মেটানো যায়। আজকে আপনাদের মাঝে আলোচনা করব, উন্নত জাতের আখের নাম কি? আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি এবং সেই সাথে আখ চাষের জন্য কেমন মাটির প্রয়োজন? সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। নিচে ধাপে ধাপে সব বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
উন্নত জাতের আখের নাম কি?
আখের বিভিন্ন রকম জাত রয়েছে। বেশ কিছু আখের জাতকে উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ অনেকেই জানতে চান, উন্নত জাতের আখের নাম কি? গবেষণায় জানা যায়, ৬টি উচ্চ ফলনশীল আখের জাত সম্পর্কে। গবেষণা অনুযায়ী উচ্চ ফলনশীল জাতের আখের মধ্যে বেশ কয়েকটি নাম উল্লেখযোগ্য এর মধ্যে রয়েছে, ঈশ্বরদী ৩৯, ঈশ্বরদী ৪০, বিএসআরআই আখ ৪১, বিএসআরআই আখ ৪২, বিএসআরআই আখ ৪৩ এবং বিএসআরআই আখ ৪৪।
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়ার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুন আছে
এ সমস্ত আখের জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১০০ টনেরও বেশি এবং সেই সাথে চিনি আহরণের হার ১২% এর উপর। এই আখের জাতগুলো বিভিন্ন রকম প্রতিকূল অবস্থায় চাষাবাদ করা যায়, এমনকি লবণাক্ত এলাকায়ও চাষের উপযোগী। এছাড়াও বিএসআরআই আখ ৪১ এ জাতের আখ চিনি, গুড় এবং রস ছাড়াও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী। আর বিএসআরআই ৪১ জাতটির গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১৫০ টনের ও বেশি। আমরা অনেকেই আখ দাঁতে চিবিয়ে খেতে পছন্দ করি, সে ক্ষেত্রে বিএসআরআই আখ ৪২, দাঁতে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী।
আখ চাষ করে লাভবান হতে চাইলে উপরোক্ত যেকোনো একটি জাত নিয়ে আখ চাষ করতে পারেন।
আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি
আমরা সকলেই জানি আখ থেকে আমরা চিনি পেয়ে থাকি, আবার গুড় পেয়ে থাকি এবং সেই সাথে আখের রস পান করা যায়। আর এই আখ অর্থকরী ফসল হিসেবে অন্যতম। তবে এই আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আজ আমরা আলোচনা করব আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি সে সম্পর্কে। আসুন তাহলে জেনে নেই, আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি বিস্তারিতভাবে।
মাটি নির্বাচনঃ বলতে গেলে প্রায় সব ধরনের মাটিতে আখ চাষ করা যায়। তবে আখ চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক মাটি নির্বাচন করা উচিত। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আখ চাষের জমিটি উঁচু অথবা মাঝারি উঁচু হয়, যেখানে পানি জমে থাকতে পারে না। এক্ষেত্রে এটেল, দোআঁশ ও এটেল-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
আখের জাত নির্বাচনঃ আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের আখের জাত রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঈশ্বরদী ৩৯, ঈশ্বরদী ৪০, বিএসআরআই আখ ৪১, বিএসআরআই আখ ৪২, বিএসআরআই আখ ৪৩ এবং বিএসআরআই আখ ৪৪ ইত্যাদি। এ সমস্ত জাতের মধ্যে যে কোন একটি জাত নিয়ে আখ চাষ শুরু করতে পারেন।
জমি প্রস্তুতকরণঃ আখ চাষ দীর্ঘমেয়াদী ফসল এবং লম্বা ও ঘন শিকর বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আর তাই আখ চাষ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আখের জমি খুব গভীরভাবে চাষ করতে হয়। যাতে করে আখের শেকড় জমির ভেতর পর্যন্ত অনায়াসেই পৌছাঁতে পারে। এ সময় প্রতি একরে, ৪ টন গোবর সার দেওয়া ভালো।
চারা রোপনের সময়ঃ আখ চাষের ক্ষেত্রে চারা রোপন করতে হয় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। তবে অনেকেই অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করে থাকেন। যদি আখ চাষের উত্তম সময় জানতে চান তাহলে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আখ চাষের জন্য উত্তম সময়।
চারা রোপন পদ্ধতিঃ আখ চাষের ক্ষেত্রে মাটি কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত খুড়ে, তারপর তিন চোখ বিশিষ্ট আখখন্ড লাইন অনুযায়ী মাথায় মাথায় স্থাপন করা হয়। আবার দু'সারি পদ্ধতিতেও লাগানো যায়। এরপর ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি মাটি দিয়ে আখগুলো ঢেকে দিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ চোখ গর্তে চলে গেলে কি করবেন
পরিচর্যাঃ চারা থেকে ভালোভাবে গাছ বের হওয়ার পর আখ গাছগুলো যাতে হেলে না পড়ে, সেজন্য কয়েকটি আখ গাছ একসাথে করে বেঁধে দিতে হবে। জমিতে যেন সঠিক বায়ু চলাচল করতে পারে সেজন্য আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এবং সেই সাথে আখের শুকনো পাতাগুলো ছিড়ে ফেলে দিতে হবে। জমির প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। আখ গাছ অনেক বেশি বড় হয়ে গেলে, বাসের সাহায্যে ঠেস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় করণীয়ঃ আখের জমিতে অনেক সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দেয়, এ সময় সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। আঁখে সাধারণত মাজরা পোকা দেখা যায়, আর এই মাজরা পোকা দমনের জন্য কার্বোফুরান জাতীয় কীটনাশক ফুরাডান ৫ জি সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই কৃষিবিদদের সাথে সঠিক আলোচনা করে যে কোন সমস্যায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তবে সাধারণত আখ চাষে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়ে থাকে।
আখ চাষের জন্য কেমন মাটির প্রয়োজন?
আখ চাষ সাধারণত সব ধরনের মাটিতেই হয়ে থাকে। তবে আখ চাষের জন্য এটেল মাটি, দোআঁশ মাটি, এবং এটেল-দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগী। তবে সেক্ষেত্রে দেখতে হবে সে জমিতে যেন পানি নিকাশের জন্য ব্যবস্থাযুক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে আখ চাষ ভালোভাবে করা সম্ভব হয়। আখ চাষের জন্য জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করবেন উঁচু জমি নির্বাচন করতে। বেশি উঁচু জমি না পাওয়া গেলে মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করুন অর্থাৎ যে সমস্ত জমিতে পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করুন। আপনারা জানলেন আখ চাষের জন্য কেমন মাটির প্রয়োজন?
আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কিঃ উপসংহার
অর্থকরী ফসল আখ। আর আখ চাষ বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। তবে আজ আপনাদেরকে সাধারণত যে সমস্ত পদ্ধতিতে চাষ করা হয়ে থাকে, তার একটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ শরীরে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
আপনারা আজকের আর্টিকেলে জানলেন, উন্নত জাতের আখের নাম কি? আখ চাষের পদ্ধতিগুলো কি ও আখ চাষের জন্য কেমন মাটির প্রয়োজন? সে সম্পর্কে। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন, ধন্যবাদ। ২৫২৪২
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url