শরীরের রক্তের অভাব ক্লান্তি দুর্বলতা বুক ধরফর হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

অনেকেই অল্পতে হাঁপিয়ে ওঠা , বুক ধরফর , শরীর রক্তের শূন্যতা , ক্লান্তি দুর্বলতা এসব রোগে অধিকাংশ মানুষই ভুগে থাকে । তাই এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে জানতে পারবেন এই সমস্যার সমাধান ।


তাহলে দেরি না করে  জেনে নিন শরীরের রক্তের অভাব ক্লান্তি দুর্বলতা বুক ধরফর  হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি হতে পারে?

পেজ সূচিপত্রঃ শরীরের রক্তের অভাব ক্লান্তি দুর্বলতা বুক ধরফর হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়



শরীরের রক্তের অভাব ক্লান্তি দুর্বলতা বুক ধরফর হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা যে কারনে হয়


যদি আপনি অল্পতেই হাপিয়ে ওঠেন বুক ধরফর করে পা ঠান্ডা হয়ে যায় শরীর সবসময় ক্লান্ত ও দুর্বল লাগে কোন কিছুই করতে ভালো লাগে না তাহলে বুঝবেন হয়তো আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ কম আছে। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এমন একটি ম্যাজিক্যাল উপায়ের কথা জানাবো যার মাধ্যমে মাত্র সাত দিনের মধ্যে আপনাদের শরীরে যদি রক্তের পরিমাণ কম থাকে অর্থাৎ রক্তাল্পতার সমস্যা থাকে এই সমস্যা ৯৯ শতাংশ কমে যাবে।

শুধু যে রক্তাল্পতার সমস্যা ছাড়বে তা কিন্তু নয় এর সাথে সাথে এনার্জি ও স্ট্যামিনা দ্বিগুণ বাড়বে।

আরো পড়ুনঃ অলিভ অয়েল তেল যেসব রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

বর্তমানে  রক্তাল্পতা অর্থাৎ শরীরের রক্ত কমে যাওয়া একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট শিশুদের মধ্যে ৬০% মহিলাদের মধ্যে ৫০ % এবং পুরুষদের মধ্যে ২৫ %   এই রক্তাল্পতার সমস্যা বর্তমানে আছে। আমাদের শরীরে রক্ত কমে যাওয়া বলতে মূলত হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে বুঝায়। এই হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে এমন একটি উপাদান যেটি আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোনায় কোনায় অক্সিজেন কে বহন করে। তাই যখন হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাবে তখন কিন্তু আমাদের শরীরের যথার্থ পরিমানে প্রত্যেকটা প্রান্তে অক্সিজেন যাবে না। এতে যেমন আমাদের শরীরের মেজর অর্গানগুলো আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে একটা সময় এমন হবে যদি হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব বেশি কমে যায় তখন কিন্তু আমাদের শরীরের কোন শক্তি বা এনার্জি থাকবে না।


সব সময় শুয়ে পড়তে বা বসে পড়তে ইচ্ছা করবে এমনকি কোনরকম কাজকর্ম করতে ইচ্ছা করবে না। অল্প সিড়ি বেয়ে উঠলেই শরীরে শ্বাসকষ্ট হতে দেখা যাবে। চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে যাবে বা মাথা ঘুরে যেতে পারে এই ধরনের সমস্যা হতে দেখা যায়। আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের যে নরমাল রেঞ্জ সেটা হল পুরুষদের মধ্যে ১৩.৫ থেকে ১৭G/dl এবং মহিলাদের মধ্যে ১২.৫ থেকে ১৫.৫G/dl. এই নরমাল রেঞ্জের যখন নিচে নামবে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণটা তখন আমাদের শরীরে কিছু কমন লক্ষণ দেখা দিবে।


হিমোগ্লোবিনের অভাবে অথবা রক্তশূন্যতার অভাবে যেসব লক্ষন দেখা দেয়


  • হিমোগ্লোবিনের অভাবে অথবা রক্তশূন্যতার অভাবে যেসব লক্ষন দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্লান্তি দূর্বলতা , অলসতা ভাব , বুক ধরফর , মাথা ঘোরা, হাপিয়ে ওঠা অনেকের চুল পড়ে যায় পায়ের নখ ভেঙ্গে যায় ইত্যাদি
  • এমনকি মাথা ঘুরায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • শরীরের মধ্যে কোন শক্তি বা এনার্জি থাকে না
  • কোন কাজ করতে গেলেই সাথে সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এই যে কমন লক্ষণগুলো আছে এইগুলো যখন শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাবে তখন শরীরে  লক্ষ্য করা যায়।
  • আর এই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে আইরন ডেফিসিয়েন্সি অর্থাৎ আমাদের শরীরে যদি আয়রনের পরিমাণ কম হয়ে যায় তখন কিন্তু হিমোগ্লোবিন যথার্থ পরিমাণে তৈরি হয় না।


আর যখনই হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাবে তখন আমাদের শরীরে এই যে  লক্ষণ গুলোর কথা বললাম সেগুলো দেখা যাবে।


রক্তশূন্যতার মূল কারন কি?


মেজর যে কারণগুলো আছে শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার বা রক্তাল্পতার এর মধ্যে মূল যে কারণটি আছে সেটি হচ্ছে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি। আর আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এর মূলে যে কারণগুলো জড়িত থাকে সেগুলো কিন্তু আমাদের খারাপ জীবন শৈলী ও খাদ্যভাসের জন্য হয়ে থাকে। আমরা সাধারণত বিভিন্ন রকম প্যাকেটজাত খাবারদাবার বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকি। সবুজ শাকসবজি ফলমূল এইগুলো আমরা খাই না এতে আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি হয়ে থাকে।


আরেকটি মেজর কারণ হচ্ছে যদিও বা আমরা আয়রন সমৃদ্ধ খাবারদাবার খাইও কারণবশত এই আয়রনের শোষণ হয় না যার কারণে আমাদের শরীরে রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দেয়। আর যখন আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে গেছে বা রক্তশূন্যতার সমস্যা হয়েছে তখন আমরা হুট করে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ধরনের রক্ত বারানোর যেসব ওষুধ আছে সেগুলো সেবন করে থাকি। অনেক সময় এই ধরনের ওষুধ অধিকাংশ মানুষেরই শুট করে না বা এর মধ্যে যে মূল উপাদান আছে সেগুলো প্রোপার শোষণ হয় না। এই কারণেই কিন্তু আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে না।


আমাদের শরীরে যে কোষকাঠিন্য আছে সেগুলো যায় না আর এর মূলে যে একটা মেজর কারণ রয়েছে সে সেটি হল ভিটামিন সি। যাদের শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ কম আছে তারা যদি বিভিন্ন রকম আয়রন সমৃদ্ধ ওষুধ নেয়। বিভিন্ন রকমের যে আয়রনসমৃদ্ধ যে খাবারদাবার আছে সেগুলো খায় । সেক্ষেত্রে সেগুলো পেটে গিয়ে শোষণ হয় না অর্থাৎ অন্ত্র থেকে আয়রনের শোষণ হয় না। তাই আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অপরিসীম এই আয়রন জনিত খাবার-দাবার অথবা মেডিসিন  গুলোর শোষণের জন্য। আমাদের শরীরে এই আয়রনের কাজ করানোর জন্য।


চিন্তার কোন কারণ নেই যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে রক্তাল্পতার সমস্যা হয়েছে এবং খুবই কষ্ট পাচ্ছেন সব সময় শরীর ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে আছে অলসতা কাজ করছে ঘুম ঘুম কাজ করছে তাদের জন্য আজকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ  উপায় সম্পর্কে বলব। এই উপায়টিকে আপনারা টানা সাত দিন প্রয়োগ করুন এবং প্রয়োগের পর আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন অর্থাৎ রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে পারেন বা হিমোগ্লোবিন টেস্ট করে দেখতে পারেন 99% হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়বে।


যে উপায়ে রক্তশূন্যতার অভাব দূর করা সম্ভব


আজকে এই ম্যাজিক্যাল উপায়টি অবলম্বন করার জন্য তিনটি  পদক্ষেপ এর প্রয়োজন হবে।


বিট (betroot): এই বিট হচ্ছে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর মূল অস্ত্র। এর মধ্যে ভরপুর মাত্রায় আয়রন থাকে এবং ফলিক এসিড থাকে। Betroot যদি আমরা নিয়মিত খেতে পারি একে স্যালাইন হিসেবে ব্যবহার করে বা জুস তৈরি করে সেক্ষেত্রে আমাদের শরীরের কোনায় কোনায় অক্সিজেনের পরিমাণ সুন্দরভাবে যাবে। এতে আমাদের হাপিয়ে ওঠার সমস্যা থাকবে না বা শ্বাসকষ্ট হবে না। এর মধ্যে যে ফলিক  এসিড আছে এটা আমাদের রক্ত তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া যদি আমরা Betrootকে সঠিক পরিমাণে সেবন করি সেক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের শরীরে প্রবল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যাবে। যেটা আমাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এবং ফ্রি রেডিকেল ডেমেজ গুলো থেকে আমাদের বাঁচাবে এতে আমাদের স্কিনের স্বাস্থ্য  মজবুত এবং ভালো হবে। 


গাজর (carrot): গাজরের মধ্যে কিন্তু বেটা ক্যারোটিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই বেটা ক্যারোটিন আবার ভিটামিন এ তৈরিতে সহায়তা করে। ভিটামিন এ কিন্তু আমাদের মূল উপাদান  যেটা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে যদি যথার্থ পরিমানে ভিটামিন এ না থাকে সে ক্ষেত্রে কিন্তু হিমোগ্লোবিন তৈরিতে বিঘ্ন ঘটবে। যখন আমরা নিয়মিত গাজর খাব  এতে আমাদের শরীরে ভিটামিন এ যথার্থ পরিমাণে তৈরি হবে। এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে  অর্থাৎ হিমোগ্লোবিন প্রচুর পরিমাণে তৈরি হবে । এছাড়া গাজর আমাদের স্কিনের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে এবং উজ্জ্বল রাখে আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যকে এবং লিভারের স্বাস্থ্য কেউ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

আমলকিঃ এই আমলকিতে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে বিশেষজ্ঞদের মতে ৪০ টি কমলালেবু তে যে পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে ঠিক ততটা পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন একটি আমলকি কতটা শক্তিশালী ভিটামিন সি কতটা বেশি পরিমাণ থাকে এই আমলকিতে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য । এছাড়া আমলকির মধ্যেও যথার্থ পরিমানে আয়রন থাকে ফলিক এসিড থাকে যেগুলো আমাদের রক্ত তৈরিতে বেশি সহায়তা করে।


এইবার আপনারা জেনে নিন এই তিনটি জিনিস দিয়ে কিভাবে জুস তৈরি করতে হবে


১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম বিট নিন বিট কে সুন্দর ভাবে ছুলে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিন এবং এই বিটের যে পাতাগুলো আছে সেগুলো 100 গ্রামের মত নিন।  অর্থাৎ বিটরুট ১৫০গ্রাম এর মতো নেবেন এবং পাতাগুলো একশো গ্রামের মত নেবেন। গাজর আড়াইশো গ্রামের মতো নিয়ে কেটে ছোট ছোট করে নিবেন। একটি আমলকি ভিতরের আটি গুলো ফেলে দিয়ে টুকরো করে নেবেন। সবগুলো উপকরণ একটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বানিয়ে ফেলুন। তার মধ্যে অল্প পরিমাণে পানি দিয়ে নিয়ে জুস তৈরি করে নিন।


এরপরে একটি ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন এই জুসটাকে আরো সাধের করার জন্য এর মধ্যে কিছু পরিমাণ গুড় নিয়ে নিন। তবে যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তারা কিন্তু গুড় মেশাবেন না প্রতিদিন সকালে কুসুম কুসুম এক গ্লাস জল খাওয়ার কিছুক্ষণ পর এই জুসটাকে আপনি তৈরি করে নিন। এক গ্লাসের মত এবং আস্তে আস্তে সেটাকে পান করুন। অর্থাৎ আস্তে আস্তে পান করতে হবে খুব দ্রুত ভাবে পান করা যাবে না। আপনারা দুপুরে দু'ঘণ্টা খাওয়ার আগে বা খাওয়ার দু'ঘণ্টা পরে ও এই জুসটাকে প্রতিদিন এক গ্লাস করে পান করে দেখুন। মাত্র এক সপ্তাহে আপনারা জুসটাকে পান করুন গ্যারান্টি সহকারে বলা যাচ্ছে আপনাদের শরীরে রক্তশূন্যতার অভাব পূরণ হবে। অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব দ্রুতভাবে বাড়বে।


তবে শুধু এই সাতদিনের জন্যই খাবেন এমন কিন্তু না আপনারা যদি আরো ভালো রেজাল্ট পেতে চান সে ক্ষেত্রে এক মাসের মতো এই জুসটিকে আপনারা তৈরি করে পান করুন। এতে করে আপনার শরীরের হিমোগ্লোবিনের  মাত্রা খুব দ্রুত ভাবে বাড়বে।


আমাদের শেষ আলোচনা


উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আশা করি জানতে পেরেছেন এই জুসটি সেবনের ফলে রক্তশূন্যতার ঘাটতি পূরণ করবে এমন কি ক্লান্তি দুর্বলতা অলসতা ঘুমঘুম ভাব খুব ধরফর করা হাপিয়ে ওঠা সমস্যা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা চুল পড়ে যাওয়া নখ ভেঙে যাওয়া। শরীর সবসময় ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া এই যে সমস্যাগুলো সেরে যাবে এবং আপনার শরীরের শক্তি এনার্জি দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যাবে এই জুসটিকে যদি আপনারা এক গ্লাস করে প্রতিদিন সেবন করে থাকেন। পোস্টি পড়ে যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অন্যদের কাছে শেয়ার করতে ভুলবেন না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url