কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আপনি কি কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য । বিভিন্ন উপায়ে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা যায়। এমনই কিছু লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করব । কি কি সমস্যা দেখা দিলে আপনি বুঝবেন আপনার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে।
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিডনি।কিডনিতে ৭০ থেকে ৮০% সমস্যা হলেও এই রোগের লক্ষণ দেখা যায় না।
চলুন তাহলে কিডনি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
কিন্তু কখন বুঝবেন আপনার কিডনিতে রোগ হয়েছে সে সকল রক্ষণগুলো হল ক্ষুধামন্দ, খাওয়ার অনিচ্ছা, বমি হওয়া এবং সেই সাথে অতিরিক্ত দুর্বলতা। কোন কাজে মন বসে না এছাড়াও দেখা যাচ্ছে বিনা কারণে গা চুলকায়, চোখ মুখ ফুলে যাওয়া শরীরে পানি আসা এই রোগের লক্ষণ। এমনকি এ রোগ যদি তীব্র আকার ধারণ করে তখন আমাদের শরীরের যে কোন অঙ্গ আক্রমণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে।
পেজ সূচিপত্রঃকিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- প্রস্রাব সমস্যা
- দীর্ঘ স্থায়ী কিডনি রোগ
- কিডনি রোগের ব্যথা
- কিডনি রোগ শুধু কি বড়দের হয়ে থাকে
- পানি বেশি খেলে কি কিডনি ভালো থাকে
- কিডনি রোগের প্রধান সমস্যা
- কিডনি রোগের কারণ
- কিডনির সমস্যা বোঝার উপায়
- অতিরিক্ত ব্যাথার ঔষধ খাওয়া
- হাই সল্ট ডায়েট, অর্থ্যাৎ খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
- যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া
- অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া
- ধূমপান
প্রস্রাব সমস্যাঃ
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার মধ্যে একটি প্রধান কারন হলো প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া প্রসবের পরিমাণ কমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রসাবের রং লাল এবং সেই সাথে চোখ মুখ ফুলে যাচ্ছে এটি দেখা দিলে তখন বুঝতে হবে এটি কিডনির রোগ এর লক্ষণ। আবার এমনও হতে পারে প্রসাবের পরিমাণ কমে যাচ্ছে কিন্তু প্রসাবের রং লাল নয় তবে শরীর ভুলে যাচ্ছে এসব দেখা দিল তখনও বুঝে নিতে হবে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ। আবারো যদি দেখা যায় প্রসাবে খুব দুর্গন্ধ প্রসাবে জ্বালাপোড়া করা তলপেটে ব্যথা হওয়া সেটিও কিডনি রোগের লক্ষণ।
দীর্ঘ স্থায়ী কিডনি রোগঃ
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার অন্যতম হলো প্রসাব করার সময় জ্বালাপোড়া করা ঘন ঘন প্রসাব করা প্রসবের রং লাল বর্ণ ধারণ করা প্রসাবে দুর্গন্ধ হওয়া কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া শরীর মুখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদির রোগ কিডনি রোগের সংকেত। কয়েক মাস বা বছর চিকিৎসার পরও কিডনি রোগ ভালো না হলে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকলে তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে মোটা হওয়া যায়
চিকিৎসকের পরামর্শে সচেতন থাকলে এবং সঠিক সময় শনাক্ত করা গেলে এ দুটো রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
কিডনি রোগের ব্যথা
কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদন্ড থেকে একটু দূরে ডান অথবা বাম পাশে হয়ে থাকে। এটি পিছনে পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হওয়ার কথা এ ব্যথা নড়াচড়া করে এবং কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে। এই ব্যথা থেকে থেকে আসে শোয়া-বসা বা কোন কিছুতেই আরাম মেলেনা। কিডনি সমস্যার মূল কারণ যে শুধু ব্যাথাই হবে তা কিন্তু নয় এতে শরীরে পানি আসা দুর্বলতা বমি ভাব দেখা দেয়। এছাড়াও সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে এই ব্যথার সাথে প্রসাবের পরিমাণ কম বেশি হয় এবং প্রসাবে দুর্গন্ধ হওয়া এবং লালচে রং ধারণ করা এটিও হতে পারে।
কিডনি রোগ শুধু কি বড়দের হয়ে থাকেঃ
অনেকের ধারণা কিডনিতে সমস্যা শুধুমাত্র বয়স্ক লোকের হয়ে থাকে এ কথাটি সত্য নয় এটি ছোট বড় সকলেরই হতে পারে। এই রোগ খুবই সাধারণ একটি রোগ এই রোগটি হলে অনেকেই বুঝতে পারে্না। এমনকি এমন সময় বুঝে থাকেন যে, সে সময় কিছু করার থাকে না।
পানি বেশি খেলে কি কিডনি ভালো থাকেঃ
একজন মানুষের পানি কতটুকু খেতে হবে তা নির্ভর করে তার কাজের ধরন দেহের আকার পরিবেশ আবহাওয়া ইত্যাদির উপর। পর্যাপ্ত পানি কিডনি কে ভালো রাখতে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনির উপর চাপ পড়ে যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় দৈনন্দিন ৮ গ্লাস পানি পানই যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
কিডনি রোগের প্রধান সমস্যা
হলো প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোন লক্ষনই প্রকাশ না পাওয়া কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকলে ধীরে ধীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। জেনে নেই কিডনি রোগের প্রধান লক্ষণগুলো সম্পর্কে
প্রসাব কম/ বেশি হওয়া ও প্রসাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
শরীরে ক্লান্তি ভাব আসা
মাঝেমাঝেই মাথা ব্যথা হওয়া
সব সময় শীত শীত লাগা
মনোযোগ কমে যাওয়া
বমি বমি ভাব হওয়া
ওজন কমে যাওয়া
শরীরের বিভিন্ন অংশ পানিতে ফুলে যাওয়া
শরীরের বিভিন্ন অংশ চুলকানি হওয়া
প্রসাবে জ্বালাপোড়া করা
কিডনি রোগের কারণ
নানা কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গবেষণায় জানা গেছে প্রায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ এর বেশি নেফ্রাইটিসের কারণে এবং ১০ থেকে ২০ শতাংশের বেশি উচ্চ রক্তচাপের কারনে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও বংশগত কারণে ভাইরাল সংক্রমণে কিডনিতে পাথর হলে অসুস্থ কর ওষুধের অভাবেও কিডনিজনিত রোগ হতে পারে।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার বোঝার উপায়
আমরা অজান্তেই ভিতরে ভিতরে সব শেষ করে দিই বলে কিডনির সমস্যাকে নীরব ঘাতক বলা হয়। কিডনির সমস্যা দেখা দিলে শরীরে আরো বেশ কিছু রোগের প্রভাব পড়ে। এগুলোর ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি হবার পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। যেসব সমস্যা দেখলে কিডনির সমস্যা বোঝা যাবে সেগুলো জেনে রাখা খুবই জরুরী
ত্বকে চুলকানি হওয়া সেটা যে কোন জায়গায় হতে পারে
শ্বাসকষ্ট হওয়া
খাবারে অরুচি ও মুখে দুর্গন্ধ হওয়া
পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হওয়া
গরম আবহাওয়ার মধ্যেও মধ্যে থেকেও শীত শীত অনুভব হওয়া
ঘন ঘন প্রস্রাব করা
অতিরিক্ত ব্যাথার ঔষধ খাওয়াঃ
দেখা যায় আমাদের শরীরের কোন অংশে বা কোন কারণে একটু ব্যথা হলেই আমরা ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকি। এমনকি জ্বর হলেও আমরা প্যারাসিটেবল খেয়ে থাকি। এই ব্যথার ওষুধ খাওয়ার কারণে কিডনিতে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীরে ব্যথা অনুভব হলে সাথে সাথেই ব্যথার ওষুধ খাওয়া ঠিক নয় সে ক্ষেত্রে আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।
হাই সল্ট ডায়েট, অর্থ্যাৎ খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়াঃ
অনেকেই রান্নার সময় অতিরিক্ত লবণ দিয়ে রান্না করে থাকে অথবা খাওয়ার সময় ভাতের সাথে অতিরিক্ত লবণ সেবন করে থাকে। এছাড়াও ফুচকা চটপটি এইসব জাতীয় খাবারেও অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয়। আর এই সকল খাবারই আমরা বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকি। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরের সোডিয়াম প্রবেশ করে থাকে। যার ফলে আমাদের শরীরের সোডিয়ামের ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। আর এটি নষ্ট হওয়ার ফলে প্রেসার বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অন্যান্য রোগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে কিডনিতে তার প্রভাব পড়ে। যার ফলে আমাদের কিডনি ক্ষতির মুখে পড়ে। এজন্য খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া যাবেনা ।
যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করাঃ
আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত বজ্র পদার্থ তৈরি হয়। আর কিডনির কাজ হচ্ছে রক্তের সাহায্যে এই বজ্র পদার্থ কে ছেকে বের করে দেওয়া। আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করেন কিডনির এই ছাকন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেড় থেকে ২ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন এবং এটি নির্ভর করবে তার আবহাওয়ার উপর মানে হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে তাপমাত্রা হলে আমাদের শরীরে ঘাম হয়ে থাকে আর এই ঘাম থেকে অনেক পানি নির্গত হয়।যার ফলে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ চোখে গর্ত হলে কি করবেন
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া
আমাদের কিডনি সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই একজন মানুষের নিয়মিত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত তা না হলে কিডনিতে সমস্যা বেড়ে যাবে।
অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াঃ
আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। আর অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর ডায়াবেটিস হচ্ছে কিডনি রোগের সব থেকে বড় লক্ষণ তাই আমাদের অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি খাওয়া যাবে না। এতে করে শরীরের ওজন যেমন বেড়ে যাবে সেই সাথে কিডনি রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
ধূমপানঃ
ধূমপান করার ফলে ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যায় অর্থাৎ ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যারা নিয়মিত ধূমপান করে থাকে তাদের কখনোই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসে না। এটা সব সময় বাড়তেই থাকে আর ব্লাড প্রেসার হাই হওয়া মানেই কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। অনেকেই বলে থাকেন ধূমপান সাধারণত টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করে থাকে, আসলে বিষয়টা তা না ধূমপানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ বেশি পরিমাণে বেড়ে যায়।
শেষ আলোচনাঃ
আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখার জন্য কিছু নিয়ম কারণ মেনে চলা উচিত। যাতে করে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সর্ম্পকে আশা করি জানতে পেরেছেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url