খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় - কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা 2024
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আপনি কি জানতে চাচ্ছেন খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় তাহলে আজকের আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন আমরা অনেকেই জানি কিসমিস আমাদের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। কিন্তু হয়তো অনেকেই জানিনা খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয় বা খালি পেটে কিসমিস খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য উপকার নাকি অপকার?
যদি না জেনে থাকেন তাহলে চলুন জেনে নেই খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় অথবা কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কি এটি আমাদের শরীরের জন্য কতটা কার্যকর।
পেজ সূচিপত্রঃ খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয় - কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- কিসমিস খাওয়া কিসের জন্য উপকারী?
- কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়?
- সোনালী রঙের কিসমিসে কি কি স্বাস্থ্য গুণ পাওয়া যায় এবং কি উপকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
- কিসমিস সেবনের সঠিক নিয়ম এবং কখন কিসমিস সেবন করা উচিত কাদের জন্য কিসমিস সেবন করা উচিত না
- শেষ আলোচনা
কিসমিস খাওয়া কিসের জন্য উপকারী?
আমরা সকলেই সাধারনত জানি কিসমিস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কিন্তু কেন উপকারী তা কিন্তু অনেকেই জানে না। তাই আজকে এই আর্টিকেলের মধ্য দিয়েই বলবো কিসমিসের পুষ্টিগুণ কি এবং আমাদের শরীরের কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে কিসমিস কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ কাঁচা বাদাম নাকি ভাজা বাদাম কোনটি সবচেয়ে বেশি উপকারী 2024?
কিসমিস খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি অর্থাৎ কখন কিভাবে খাওয়া উচিত কাদের জন্য কিসমিস খাওয়া উচিত নয় ইত্যাদি।কিসমিস কে ইংরেজিতে বলা হয় Raisins এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Vitis Vinifera.
কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়?
আমরা সকলেই কালো আঙ্গুর চিনে থাকে সেই কালো আঙ্গুরকে শুকিয়ে কিসমিস অথবা রেইজিন তৈরি করা হয় সেটি হচ্ছে কালো রংয়ের কিসমিস আর সবুজ আঙ্গুর কে শুকিয়ে যে কিসমিস তৈরি করা হয় সেটি হচ্ছে সোনালী রঙের ্কিসমিস। কালো রঙের কিসমিস এবং সোনালী রঙের কিসমিসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই দুটো কিসমিসের মধ্যে সমান ভাবে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য গুণ উপকার পাওয়া যাবে বললেই চলে।
সোনালী রঙের কিসমিসে কি কি স্বাস্থ্য গুণ পাওয়া যায় এবং কি উপকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
কিসমিসের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, কপা্র, জিংক ম্যাগনেসিয়াম , পটাশিয়াম , ক্যালসিয়াম , ফাইবার এবং ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে থাকে। এছাড়াও সোনালী কিসমিসে কিছু হাইড্রো গুন থাকে সেটি হচ্ছে Polyphenols, Phenols এটি হচ্ছে এক ধরনের পাওয়ারফুল এন্টিঅক্সিডেন্ট।এগুলো আমাদের শরীরকে নানা রকম রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।
নিচে কিসমিসের কিছু গুনাগুন সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো👇
1. কিসমিসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর কিসমিসের মধ্যে এই ফাইবার থাকায় আমাদের শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
2. কিসমিস এসিডিটি বদহজম গ্যাস এই সব থেকেও মুক্তি দিয়ে থাকে।
3. অন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে রক্ষা করে। যাদের অন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত কিসমিস সেবন করা উচিত।
4. রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে তাদের জন্য কিসমিস ঔষধের মতো কাজ করবে। কারণ কিসমিসে থাকা আয়রন শরীরের যথার্থ পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। আর এই আয়রনকে সাহায্য করে থাকে কিসমিসে থাকা কপার ও ম্যাগনেসিয়াম।
5. হিমোগ্লোবিনের সমস্যা দূর করে যাদের শরীরে ক্লান্তি দুর্বলতা অলসতা হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা আছে তাদের জন্য প্রতিদিন কিসমিস সেবন করা উচিত।
6. হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য মজবুতেও সাহায্য করে। কিসমিস হার ও দাঁতের স্বাস্থ্য মজবুত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের শরীরের অধিকাংশ ক্যালসিয়াম কিন্তু হাড় এবং দাঁতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তাই হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য মজবুত করার জন্য নিয়মিত হলেও কিছু পরিমাণ কিসমিস সেবন করা উচিত। কিসমিসে যথার্থ পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যে টি হার ও দাঁতের ক্ষয় দূর করার কাজে সাহায্য করে থাকে এবং ঘাটতি কমায়।
7. কিসমিসের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ phytonutrients থাকে যেগুলো এক প্রকার পাওয়ারফুল এন্টিঅক্সিডেন্ট হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরুপ পলিফেনলস বা ফেনলস এইগুলো আমাদের শরীরের ফ্রিরেডিকেলস গুলোকে সরিয়ে কোষ এবং ডি এন এ ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। এমনকি আমাদের শরীরের অক্সিডিটি কে সরিয়ে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত কিসমিস সেবন করা উচিত।
8. কাভিটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে কিসমিস। কিসমিসের মধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা দাঁত এবং মাড়িকে মজবুত করতে সহায়তা করে। এমনকি মুখের মধ্যে যদি জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া জনিত কোন সমস্যা হয়ে থাকে সেটিও দূর করে থাকে এ কিসমিস। এছাড়াও মাড়ি ফুলে যাওয়া এসব রোগ থেকেও মুক্তি দেয় এমনকি দাঁতের ইনফেকশন থেকেও মুক্তি দেয়।
9. চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই কিসমিস। আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে সুন্দর রাখার জন্য তীক্ষ্ণ রাখার জন্য এবং ফোকাস কে ভালো রাখার জন্য কিসমিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।কারণ কিসমিসের মধ্যে যে পলিফেনলস পাওয়া যায় এবং ভিটামিন এ থাকায় এটি আমাদের চোখকে ভালো রাখে। দৃষ্টি শক্তিকে মজবুত এবং তীক্ষ্ণ রাখতে কিসমিস সাহায্য করে থাকে। তাই প্রতিদিন অল্প করে হলেও কিসমিস সেবন করবেন।
10. পুরুষদের জন্য যৌন শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাতের বেলা এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে আধা কাপের মতো কিসমিস ভিজিয়ে যদি সেটি সেবন করা হয় সেক্ষেত্রে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া যায় এমন অনেক সমীক্ষায় জানা গেছে।
কিসমিস সেবনের সঠিক নিয়ম এবং কখন কিসমিস সেবন করা উচিত কাদের জন্য কিসমিস সেবন করা উচিত না
আধা কাপ এর মত কিসমিস অর্থাৎ এক মুঠো বা ১০ থেকে ১৫টা কিসমিস রাতে এক গ্লাস জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। সারারাত ভিজে যখন ফুলে যাবে সকালবেলা খালি পেটে কিসমিস গুলোকে সুন্দর করে চিবিয়ে পুরো জলটাকে পান করে নিন। এভাবে এক থেকে দেড় মাস যদি আপনি কিসমিস সেবন করতে পারেন সেক্ষেত্রে আজকে এ আর্টিকেলে উল্লেখিত যত হেলথ বেনিফিট আছে সেগুলো আপনি যথার্থ পরিমাণে পাবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি হচ্ছে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা কিসমিস সেবন করা থেকে দূরে থাকুন কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিসমিস ক্ষতির কারণ হবে।
শেষ আলোচনা
আমাদের শরীরের শক্তি ও অ্যালার্জির জন্য কিসমিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কারণ এর মধ্যে এনার্জিবর্ধক ভিটামিন মিনারেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। জানা গেছে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ও কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ কিসমিসে অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে আর এই পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা কে ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। .যাদের রক্তাল্পতা জনিত সমস্যা আছে এমন কি যাদের হার ও দাঁত দুর্বল হয়ে গেছে।
এমনকি শারীরিক দুর্বলতার সমস্যা থেকেও মুক্তি দেবে এই কিসমিস তবে অনেকেই কিসমিস রাতে গরম দুধের সাথে সেবন করে থাকে এটাও উপকারে আসবে। তবে যদি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সকালে সেটি খালি পেটে খাওয়া যায় সেটি খুব বেশি উপকারে আসবে। কারণ জলের সংস্পর্শে কিসমিসের মধ্যে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো একটিভ হয়ে যায় এবং সেটি পেটে গিয়ে খুব সুন্দর ভাবে কাজ করে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url